
লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে শুরু হচ্ছে পুণ্য স্নানোৎসব
Progga News Desk:
লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুণ্য স্নানোৎসব। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দিনগত রাত ২টা থেকে পরদিন রাত ১২টা ৪৫ পর্যন্ত এ উৎসব চলবে। উৎসবে মেতে উঠবে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখো পুণ্যার্থী ভক্তবৃন্দ ।
লাঙ্গলবন্দ বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত একটি পবিত্র হিন্দু তীর্থস্থান। চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অসংখ্য পুণ্যার্থী এখানে পুণ্যস্নানের জন্য আসেন। লাঙ্গলবন্দের এ জলধারায় স্নান করে পাপমুক্ত হয়েছিলেন পরশুরাম মুনি । শাস্ত্রোক্ত পরশুরাম মুনির পাপমুক্তির কথা স্মরণ করেই বহু বছর ধরে পুণ্যার্থীরা এই অষ্টমী-পুণ্যস্নান করে আসছেন। চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে জগতের সকল পবিত্র স্থানের পুণ্য ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়। ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানের সময় ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, পিতৃপুরুষের উদ্দেশে অর্পণ করা হয়।
প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপসহ দেশি-বিদেশি পুণ্যার্থীরা লাঙ্গলবন্দে পুণ্যস্নানে আসেন।
মন্ত্রপাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরিতকী, ডাব, আম্রপল্লব নিয়ে পূণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নেবেন। লগ্ন শুরুর পরপর পূণ্যার্থীর ঢল নামবে লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। পাপমোচনের বাসনায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পুণ্যার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠবে লাঙ্গলবন্দ।
আগত ভক্তবৃন্দ যাতে নির্বিঘ্নে পুণ্যস্নান করতে পারেন সেজন্য এখানে অনেক ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। এই বাঁধানো ঘাটগুলোর বিভিন্ন নান্দনিক নাম রয়েছে। যেমন - অন্নপূর্ণা ঘাট, প্রেমতলা ঘাট, জয়কালী ঘাট, বরদেশ্বরী ঘাট, গান্ধী ঘাট, শংকরঘাট, কালীদহ ঘাট, শিখরী ঘাট ইত্যাদি। এই ঘাটগুলোর পাশাপাশি এখানে অনেক মন্দির ও আশ্রম গড়ে উঠেছে।
এবার দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন নারায়ণগঞ্জ প্রশাসন। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিয়মিত লাঙ্গলবন্দ স্লান উৎসব এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
২০১৫ সালের ২৭ মার্চ বার্ষিক মেলা চলাকালীন স্নানের জন্য লাঙ্গলবন্ধে ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি ভক্ত ভিড় করেছিলেন। সনাতনী হিন্দুদের পবিত্র স্নান অনুষ্ঠান 'অষ্টমী স্নান' চলাকালীন ভিড়ে পদদলিত হয়ে দশজন সনাতনী ভক্ত নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছিলেন। অপ্রত্যাশিতভাবে বিশাল জনসমাগম এবং কর্তৃপক্ষের যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে এই পদদলিত হয়ে প্রাণহানির ঘটেছিলো বলে জানা যায়।
কিন্তু এবার স্লান উৎসবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এক হাজার ৫০০ পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি, র্যাব, আনসার, বিজিবি সদস্যরাও নিয়োজিত থাকবে। বসানো হয়েছে সাতটি ওয়াচ টাওয়ার ও ৭০টির অধিক সিসি টিভি ক্যামেরা। উৎসবে সাতটি মেডিকেল ক্যাম্প ও ১০টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকবে জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য।
এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ সব জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান স্লান উৎসব চলাকালীন সময় প্রস্তুত থাকবে। পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হবে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী। এবার ২০টি ঘাটে পূণ্যার্থীরা স্লান করবেন।
লাঙ্গলবন্দ স্লান উৎসব উদযাপন ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি বলেন, উৎসবকে কেন্দ্র সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বেশি জোরদার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নিরাপত্তায় এবার আমাদের সঙ্গে সেনাবাহিনী থাকবে। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে ম্যাপ টানিয়ে দেওয়া হবে। আশা করি এবার স্নানোৎসব আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপন করতে পারবে ভক্তরা।